Prabir Ghosh Exposed  প্রবীর ঘোষ উন্মোচিত

কেন এই ওয়েবসাইট ? 

পশ্চিমবঙ্গে তথা গোটা বঙ্গভাষী সমাজে যুক্তিবাদী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতির কথা যাঁরা জানেন, তাঁরা সকলেই সম্ভবত প্রবীর ঘোষের কাজকর্ম ও তার পরিণতি সম্পর্কে কিছু না কিছু শুনেছেন। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই তিনি কুসংস্কার-বিরোধী লেখালিখি করতে থাকেন, এবং ১৯৮৫ সালে ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ শীর্ষক বই লিখে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীকালে এ বইটির আরও কয়েকটি খণ্ড প্রকাশিত হয়, এবং এ ছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি বই লেখেন। যেহেতু তার আগে বাংলা ভাষায় যুক্তিবাদী লেখাপত্র ছিল নামমাত্র, তাই এর মধ্য দিয়ে তিনি যথেষ্ট পরিচিতি অর্জন করেন। ওই ১৯৮৫ সালেই তিনি আরও কয়েকজন যুক্তিমনস্ক মানুষের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন ‘ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতি’, ১৯৮৯ সালে নিবন্ধীকৃত হবার পরে যার নাম দাঁড়ায় ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’, লোকমুখে সংক্ষেপে ‘যুক্তিবাদী সমিতি’। এতে তিনি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন কৃতী মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। কুসংস্কার, অলৌকিকতা, তন্ত্র-মন্ত্র-ভূত-প্রেত-ভগবান, জ্যোতিষ, ওঝা-গুনিন-তান্ত্রিক, সমস্ত রকম গুজব ও অযৌক্তিক বিশ্বাস, ধর্মীয় ভেদাভেদ ও জাতপাত ইত্যাদির বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রচার ও আন্দোলনে এই সংগঠনের নাম জনমানসে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রবীর ঘোষ ছিলেন যুক্তিবাদী সমিতির ‘সাধারণ সম্পাদক’। ফলত, সমিতির সুনামের সঙ্গে প্রবীর ঘোষের ব্যক্তিগত পরিচিতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হয়ে পড়ে। দুঃখের বিষয়, ১৯৯২ সাল থেকে প্রবীর ঘোষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে থাকে সমিতির বাইরে থেকে, এবং ভেতর থেকেও। ভেতর থেকে যে সমস্ত অভিযোগ আসে, সেগুলো মূলত সদস্যদের সঙ্গে উদ্ধত ও অপমানজনক আচরণ সংক্রান্ত। কিন্তু, বাইরে থেকে আসা অভিযোগগুলো ছিল অনেক বেশি গুরুতর।  

প্রবীর ঘোষ নিজেকে মনোবিদ বলে দাবি করতেন, এবং মানসিক সমস্যার জন্য অনেকে তাঁর কাছে আসতেন। সে জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ তাঁর আছে, এমন দাবি তিনি করতেন, এবং সমিতির সদস্যরা বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবশত কখনও তা যাচাই করার চেষ্টা করেননি। মনোচিকিৎসা, বিশেষত সম্মোহন-চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকের মানসিক সমস্যা নিরাময় করার দাবি তিনি ঘনিষ্ঠদের কাছে তো করতেনই, এমন কি, তাঁর বইপত্রেও এমন স্পষ্ট দাবি বহু জায়গায় দেখা যায়। অনেকেরই, বিশেষত মহিলাদের, ব্যক্তিগত সমস্যা তিনি আগ্রহ নিয়ে শুনতেন। এবং, তাদেরকে বোঝাতেন যে, তার সমস্যার প্রতিকারের জন্য ঘোষ মহাশয়ের সঙ্গে একান্তে দেখা করা উচিত। কোনও কোনও মহিলা তা করেছেন, এবং ঘোষ মহাশয়ের তরফে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমন অভিযোগ সমিতির বাইরে থেকে এসেছিল। তবে, তখন সমিতির অন্যান্য সদস্যরা তা বিশ্বাস করেননি, বরং একে সমিতি ও আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলেই মনে করেছিলেন। 

১৯৯৬ সালের মে মাস নাগাদ যুক্তিবাদী সমিতিরই এক নারী সদস্যের কাছ থেকে এমন অভিযোগ আসে। তখন সদস্যেরা তদন্তে নেমে ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পান, এবং এমন আরও কিছু ঘটনা আবিষ্কার করেন। এইসব তথ্য-প্রমাণ সমিতির ১৮/০৮/১৯৯৬ তারিখের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভায় পেশ করা হয় প্রবীর ঘোষের উপস্থিতিতেই, এবং ওই সভাতেই তাঁর কাছে উপস্থিত সদস্যদের সামনে মনোচিকিৎসায় প্রশিক্ষণের প্রমাণ দাবি করা হয়, কিন্তু তেমন কিছুই তিনি দেখাতে পারেননি (অনেক পরে জানা যায়, তিনি আসলে একটি ভুয়ো প্রতিষ্ঠান থেকে একটি ভুয়ো ডিগ্রি জোগাড় করেছিলেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যথাস্থানে পাওয়া যাবে এই সাইটেই)। এ ছাড়াও, আর্থিক ও সাংগঠনিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ সহ আরও বেশ কিছু অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে, যার কোনওটিরই উত্তর তিনি দিতে পারেননি। ফলত, ওই সভাতেই তিনি সর্বসম্মতিক্রমে বহিষ্কৃত হন। অনেকগুলো বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে সে খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু, বহিষ্কৃত হয়েও প্রবীর ঘোষ নিজের লেখাপত্রে নিজেকে সমিতির ‘সাধারণ সম্পাদক’ বলে দাবি করতে থাকেন। প্রবীর ঘোষের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করা হয়, এবং তিনিও দুটি পাল্টা মামলা করেন। আমাদের আইনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এইসব মামলা দীর্ঘদিন চলতে থাকে, এবং বিভ্রান্তিও ছড়াতে থাকে। প্রবীর ঘোষ তাঁর দায়ের করা দুটি মামলাতেই হেরে যান, কিন্তু নারী নির্যাতনের মামলায় প্রমাণের অভাবে খালাস পেয়ে যান (তাঁর অভিযোগকারী মহিলার পক্ষের আইনজীবী রহস্যজনকভাবে প্রমাণগুলো ঠিকঠাক পেশই করেননি আদালতে)। সমিতির মালপত্র চুরির মামলায় তাঁর বাড়ি থেকে পুলিশি তল্লাশি চালিয়ে চুরির মালপত্র উদ্ধার করা হয়, এবং সেগুলো বর্তমানে সমিতির হেফাজতেই আছে। তবে, চুরির অভিযোগ থেকে খালাস পেয়ে তিনি শাস্তি এড়াতে পেরেছিলেন (এটি এখনও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন, যদিও)। এই মুহূর্তে এই বিষয়টিকে ঘিরে সমিতির তরফে পাঁচটি মামলা চালু আছে এখনও, যার মীমাংসায় এখনও কয়েক বছর লেগে যাবে। প্রবীর ঘোষের তরফে এই মুহূর্তে সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই, যদিও সমিতির নামে অপরাধমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাবার চেষ্টা আছে প্রবলভাবেই। 

তবে, আইনি পদক্ষেপ অসম্পূর্ণ থাকলেও, ‘সোশাল মিডিয়া’ বস্তুটির আবির্ভাবের আগে পর্যন্ত এ নিয়ে খুব বেশি বিভ্রান্তি ছড়াতে পারেনি। আনুমানিক ২০১০ সাল থেকে প্রবীর ঘোষ কিছু ব্যক্তির সাহায্যে অন্তর্জাল মাধ্যমে, বিশেষত ফেসবুকে প্রবলভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকেন, এবং আবারও নানা গণ-প্রতারণার আয়োজন করতে থাকেন। এমন কি, ২০১৬ সাল নাগাদ সমিতির প্রকৃত সদস্যদেরকে আক্রমণ এবং গালিগালাজও শুরু হয়। তখন সমিতির তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য-যুক্তি সহকারে পাল্টা প্রচার শুরু হয়, এবং কয়েক বছর টানা মোকাবিলার পর বিষয়টি ক্রমে মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে আসতে থাকে। ফলত, অপরাধমনস্ক প্রতারকদের গলার জোরও অনেকটাই কমে আসে।

তবু, লোক ঠকানোর চোরাগোপ্তা চেষ্টা আজও চালু আছে, এবং কিছুদিন চুপচাপ থাকার পরই মাঝেমাঝে তা আবারও জেগে উঠছে। যদিও প্রবীর ঘোষের যাবতীয় কুকীর্তি  ও প্রতারণা এখন ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে, তবুও অনেকেই তা জানতে পারেন না, বা ভুলে যান। কারণ, এ ব্যাপারে অন্তর্জাল মাধ্যমে সমিতির তরফে যা কিছু বলা হয়েছে তার সবই ফেসবুকে, যা সবাই দেখতে পায় না, এবং যা কিছু দিন পরেই বিস্মৃতির গর্ভে তলিয়ে যায়। তাই, আমরা চেয়েছিলাম এই সমস্ত লেখাগুলো কোথাও একটা এক জায়গায় গুছিয়ে রাখতে, ফেসবুকের ভেতরে এবং বাইরেও, যা সবাই চাইলেই খুঁজে পাবেন খুব সহজে। সেইজন্যেই এই সাইট-টি প্রকাশ করা হল যুক্তিবাদী সমিতির তরফে (একই সঙ্গে একই বিষয় নিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে একটি ফেসবুক পেজ-ও)। প্রবীর ঘোষের কুকীর্তি ও প্রতারণা উন্মোচন করে আমরা যা যা লিখেছিলাম ফেসবুকে, তার প্রায় সবই স্থান পাচ্ছে এখানে, শুধু গুরুত্ব বিবেচনায় বাদ যাচ্ছে সামান্য দুয়েকটি। এখানে লিখিত তথ্য-যুক্তি-ব্যাখ্যা তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রামাণ্য নথিপত্রের ছবি, নিউজক্লিপ, এবং এমনকি ভিডিও-ও।

এগুলো সবই পাঠক এখানে পেয়ে যাবেন শিরোনাম ধরে ধরে, এবং এই হোমপেজ-এর ওপরে ও নিচে উভয়স্থানেই। যথারীতি, ঠিকঠাক শিরোনামে ক্লিক করলেই চলে আসবে ঠিকঠাক লেখাটি। তবে, লেখাগুলো সম্পর্কে কিছু কথা এখানে বলে রাখাটা বোধহয় বাঞ্ছনীয়, তা না হলে এই বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকে সম্যক অবহিত নন এমন পাঠকেরা বিস্মিত হতে পারেন। 

যথাস্থানে গেলেই পাঠক দেখতে পাবেন, এই লেখাগুলো লেখা হয়েছে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক, কর্কশ ও স্পর্শকাতর ভাষা ও ভঙ্গিতে, এবং সেখানে প্রবীর ঘোষের সম্মান রক্ষার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করা হয়নি। বরং, একজন নারী-নির্যাতনকারী গণপ্রতারক, যিনি সতীর্থদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আন্দোলনে অন্তর্ঘাত চালিয়েছেন, তেমন ব্যক্তির প্রতি যে তীব্র বিরাগ স্বভাবতই থাকার কথা, তারই প্রকাশ ঘটেছে লেখাগুলোতে। অবশ্য, এহেন ভাষা ও ভঙ্গির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। সে কারণটি হল সেই নির্দিষ্ট প্রেক্ষিত, যেখানে দাঁড়িয়ে লেখাগুলো লেখা হয়েছে। লেখাগুলো লেখা হয়েছিল সোশাল মিডিয়াতে (মূলত ফেসবুকে) প্রবীর ঘোষের কুকর্ম-সঙ্গীদের মিথ্যে প্রচার, গালিগালাজ ও আক্রমণের জবাব দেবার জন্য, এবং তার ভাষা ভঙ্গি ও মেজাজ সেভাবেই নির্ধারিত হয়েছিল। 

বলা বাহুল্য, এখানে সেগুলোকে সম্পাদনা করে ‘ভদ্র’ চেহারা দেবার কোনও চেষ্টা করা হয়নি (বানান, বাক্যগঠন ইত্যাদি সংশোধিত হতেই পারে, যদিও)। তার কারণ হচ্ছে, এই লেখাগুলোর মধ্যে আমরা বক্তব্য বিষয়টুকু শুধু নয়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতটাও সংরক্ষণ করতে চেয়েছি। ফলত, এখানে এগুলো ঠিক সেই রূপেই প্রকাশিত হয়েছে, যেভাবে তারা ‘ফেসবুক’-এ প্রকাশিত হয়েছিল বিগত কয়েক বছরে। বলে রাখা উচিত, প্রায় সব লেখাই সমিতির তরফে লিখেছিলাম আমি নিজে।

দুঃখের বিষয়, এই বিষয়টি সংক্রান্ত কোনও ইংরেজি পাঠ্যবস্তু এখানে দেওয়া গেল না, অতি জরুরি হওয়া সত্ত্বেও। ভবিষ্যতে সে চেষ্টা হবে।

অনেক জরুরি নথি আছে যা দেওয়া দরকার কিন্তু এই মুহূর্তে দেওয়া গেল না। তাছাড়া, কিছু আইনি প্রশ্নে কোনও কোনও পাঠক হয়ত আরও ব্যাখ্যা দাবি করতে পারেন। আশা করি, সে সব ব্যবস্থা আমরা দ্রুতই করে ফেলতে পারব। ইতিমধ্যে কারুর কোনও প্রশ্ন থাকলে, নিম্নোক্ত অন্তর্জাল-ঠিকানায় ইমেল করতে পারেন।

ধন্যবাদসহ

(দেবাশিস্ ভট্টাচার্য)

 সাধারণ সম্পাদক, 

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি, 

৩১ প্রাণকৃষ্ণ সাহা লেন, বরানগর, কলকাতা ৭০০০৩৬

ইমেল - srai.yuktibadi@gmail.com


তারিখ - ১৬/০২/২০২৩